ছবি : সত্যমেব জয়তে
পরিচালক: অরিন্দম শীল
অভিনয়: বিপিন শর্মা, জয়ন্ত কৃপালনী, চুমকি চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অর্জুন চক্রবর্তী, সৌরসেনী মিত্র, রেশমী ভট্টাচার্য
প্রযোজনা: জি৫
রেটিং: ৪/৫
হিয়া নস্টাল: আপনি কিন্তু সব দেখেছেন মনসুর....
১৯৮৬-র 'আতঙ্ক': স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রকে খুন করতে দেখে ফেলেছিলেন মাস্টারমশাই। সেটা বুঝতে পেরে হিমশীতল গলায় ছাত্রের বারেবারে হুমকি, আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি মাস্টারমশাই। দিনে-রাতে-শুতে-জাগতে এই হুমকি আর সারাক্ষণ ভয় আঁকড়ে চলার পরেও ছাত্রের দল মাস্টারমশাইকে ছুরি মেরেছিল। সেদিন জল মাথার ওপরে উঠেছে বুঝে থানায় যান শিক্ষক। পরিণামে তাঁর মেয়ের মুখে অ্যাসিড ছোঁড়ে গুণ্ডারা। পুলিশ গ্রেফতার করে তাদের। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা গল্প অবলম্বনে তপন সিংহের সেই থ্রিলার ছবি 'আতঙ্ক' ৫টি বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল।
মমতায় মুগ্ধ ‘শেষের গল্প', ধ্রূপদী সৌন্দর্য নিয়ে আজও সৌমিত্র অনায়াস
২০১৯-র 'সত্যমেব জয়তে': সেই ছবির গন্ধ হালকা গায়ে মেখে স্বাধীনতা দিবসে অনলাইনের (Bengali Web Film) জন্য অরিন্দম শীলের (Arindam Sil) প্রথম ৯০ মিনিটের বাংলা ছবি 'সত্যমেব জয়তে'। মাত্র ৯ দিনে কলকাতার রাস্তায় ঝটিতি শুটিং পরিচালকের। এক মুসলিম পরিবারের তিন দশকের বাস শহরে। বাবা-ঠাকুর্দার মুদিখানার দোকানের ওপর লোভ স্থানীয় নেতার। হুমকি-অর্থলোভ দেখিয়েও কিছুতেই ওই দোকানদারকে বশে আনতে পারে না সে। একদিন সেই দোকানদারের মেয়ের ওপর হামলা করে নেতার দলের গুণ্ডারা। সবাই যখন বারান্দায়, জানলার ফাঁকে উঁকি মেরে রুদ্ধশ্বাস নাটক দেখছে তখন ওই দুই অসহায় আক্রান্তকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এক বৃদ্ধ প্রাক্তন সামরিক অফিসার। বদলে খোয়া যায় তাঁর প্রাণ। সেসময়েই সেখানকার থানায় বদলি হয়ে আসেন নতুন অফিসার। যিনি সত্যের পূজারি। তাঁর ছোঁয়ায় পালটে যান থানার ঘুষখোর সেকেন্ড অফিসার। এবং বউ ও সেকেন্ড অফিসারের সাবধানবাণী, 'তুমি কিন্তু কিছুই দেখনি মনসুর' ভুলে আদালতে সাক্ষী দেন দোকানদার আর তাঁর মেয়ে। আদালতে হেরে যায় পুলিশ পক্ষ। কিন্তু জিতে যায় অন্যভাবে। কীভাবে? সেটার জন্যই দেখা জরুরি 'সত্যমেব জয়তে' (Satyamebo Jayote)।
উল্টে দেখুন...পাল্টায়নি: ৭৩ বছরের স্বাধীনতা আর দুটি ছবির মধ্যেকার ব্যবধান ৩৩ বছর। এতগুলো বছরে তাহলে কতটা স্বাধীন হয়েছি আমরা? প্রশ্ন জিভের ডগায় এলেও ছোঁড়ার সাহস দেখাননি কেউ। হ্যাটস অফ অরিন্দম, আপনি মাত্র ৯০ মিনিটে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। পিচগলা গরমে একঝাঁক টলি-বলি তারকা নিয়ে কাজ করা চাট্টিখানি কথা নয়। আপনি সেটাও করে দেখিয়েছেন।
এই ছবিতে এক সে বড়কর এক অভিনেতার অভিনয় নিয়ে কথা বলা ধৃষ্টতার সমান। একসঙ্গে সব অভিনেতা ভী-ষ-ণ বড় মাপের হলে কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। তখন সেরা জিনিসটাই বেড়িয়ে আসে। দোকানদারের চরিত্রে 'তারে জমিন পর' খ্যাত বিপিন শর্মা অসাধারণ। নিজের বাহুল্য ছেঁটেকেটে ওসি হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য অর্জুন। খুবই প্রাণবন্ত অনির্বাণ, সৌরসেনী, রেশমী। আর সুদীপ্তা তো এই চরিত্র পেলে খুলে খেলবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে সবচেয়ে সেরা জয়ন্ত কৃপালনি। বিরোধী পক্ষের উকিল হিসেবে তাঁর দাপট আর সহকর্মীর জন্য, দেশের জন্য তাঁর অনুভূতি একটাই প্রশ্ন জাগাবে, হাউ ইজ দ্য 'জোশ', স্যার? অনেক দিন পরে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে দেখে ভালো লেগেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, লিপিচিত্র, সম্পাদনা যথাযোগ্য।
তারাখসা সিতারা, ভোরের আগেই অপমৃত্যু ভোরের প্রসূতি-র
চলো পাল্টাই: একই সঙ্গে সমাজ ব্যবস্থা পাল্টানোর ডাকও দিয়েছেন অরিন্দম। নিজের ভেতরের আলো জ্বেলে। যে আলোয় আলোকিত ওসি অনিন্দ্য সর্বাধিকারী। পাশাপাশি, 'আপনি কিন্তু সব দেখেছেন মনসুর'---- এই ভাবনা সবার মনে ছড়িয়ে দিয়েছেন। স্বাধীনতার দিন নিজের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এই ডাক-ই তো শুনতে চায় আম-আদমি। বড়পর্দার মতো অনলাইনেও তাই পরিচালকমশাই, 'আপনি থাকছেন স্যার'।