ছবি: গোয়েন্দা জুনিয়র
পরিচালক: মৈনাক ভৌমিক
অভিনয়: শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, অনুষা বিশ্বনাথন
প্রযোজনা: এসভিএফ
রেটিং : ২.৫/৫
ট্যাগলাইন: এমন কেন সিনিয়র হয় না, আহা!
বেশ ছিল বিক্রম। মা-বাবার সঙ্গে খুনসুটি। মায়ের গোয়েন্দা বই নিয়ে পড়া। বাবার থেকে বায়োলজির পাঠ নিয়ে স্কুলে বরাবরের টপার। ভালো ছেলের যা যা গুণ থাকা দরকার, একটু বেশি রকমেরই আছে। সেই ছেলে আচমকাই মা-বাবাকে হারিয়ে কাকা-কাকিমার কাছে আশ্রিত। মায়ের গল্পের বইয়ে সারাক্ষণ আশ্রয় খুঁজতে থাকা ছেলেটি কখন যে গোয়েন্দার মতোই মগজাস্ত্রের অধিকারী হয়ে ওঠে টের পাননি কাকা-কাকিমাও। যখন টের পেলেন ততক্ষণে বিক্রমের ওপর নজর পড়েছে কাকার সিনিয়র গোয়েন্দা সঞ্জয়ের।
শহরের বিখ্যাত মিষ্টির দোকানের মালিকের আচমকা মৃত্যু, মৃত্যু স্বাভাবিক কি অস্বাভাবিক তাই নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে গিয়েই সঞ্জয়ের তৃতীয় নয়ন হয়ে ওঠে গোয়েন্দা জুনিয়র। কাকা বা সঞ্জয় কেউই যখন মাথা ঘামিয়েও সমাধান করে আনতে পারছেন না মৃত্যুরহস্য তখনই তাক লাগিয়ে দিয়ে একের পর সমাধান সূত্র খুঁজে বের করেছে সে। এক সিনিয়রের প্রশয়ে কীভাবে এক প্রতিভা গুটি কেটে ধীরে ধীরে বেরিয়ে পাখা মেলার উপযুক্ত হয়ে ওঠে তারই গল্প গোয়েন্দা জুনিয়র।
মৈনাক ভৌমিক (Mainak Bhowmik) বরাবরই সম্পর্কের প্রতি অবসেসড। বর্ণ পরিচয় আর গোয়েন্দা জুনিয়র দিয়ে সম্প্রতি তিনি স্বাদবদলে আগ্রহী হয়েছেন। কিন্তু যার যেটা জঁর তাঁর হালকা দাগ তো রয়েই যায় কাজে। তাই ছবিতে গোয়েন্দাগিরির থেকেও বেশি ফোকাসড মা-বাবা-বিক্রম, কাকা-কাকিমা-বিক্রম, সিনিয়র-জুনিয়ারের স্নেহমাখা সম্পর্ক, সিনিয়রের মেয়ে টুকির সঙ্গে টিনএজ ক্রাশ, মা-বাবাকে আচমকা হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা, মৃত ব্যক্তির যৌথ পরিবারের খুঁটিনাটি....ইত্যাদি ইত্যাদি। তর্কের খাতিরে প্রশ্ন উঠতেই পারে, গোয়েন্দা কি মানুষ নয়! তার অনুভূতি থাকতে নেই? সেক্ষেত্রে উত্তর, অনুভূতি থাকবে অবশ্যই, কিন্তু ছাপিয়ে যাবে না। ছবিতে সেটা হয়েছে বলেই এই ছবি গোয়েন্দা ছবি কম সম্পর্কের ছবি বেশি।
বাকি অভিনয়। মৈনাকের 'জেনারেশন আমি'র তিন প্রধান অভিনেতা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, অনুষা বিশ্বনাথন আর ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। ফলে, এঁরা তিনজনেই অভিনয়ে স্বচ্ছন্দ। তবে বিশেষ করে ভালো লেগেছে শান্তিলাল-ঋতব্রতর রসায়ন। আর স্পাইক করা চুলের ঋত চোখেমুখে সারল্য মেখে সত্যিই অভিনয় গুণে গুটি ছেড়ে পাখা মেলছে আস্তে আস্তে। ছবির আদ্যন্ত জুড়ে এই ভালোলাগা রয়েইছে। বাবা-ছেলের যুগলবন্দি থাকলে বাবা তাঁর অপত্য স্নেহে কীভাবে ছেলেকে স্ক্রিন ছেড়ে দিয়ে শুধুই সঙ্গত করে যান, সেই অনুভূতিতেই যেন আচ্ছন্ন গোটা ছবি।